সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য pdf আকারে আলোচনা করা হলো

 সিন্ধু সভ্যতার বা হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য pdf গুলি নিচের সুন্দর করে আলোচনা করা হলো। যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য থেকে অবশ্যই কোশ্চেন থাকে সেই কারণেই আমরা হিন্দু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করলাম | 

সিন্ধু সভ্যতার বা হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য pdf
সিন্ধু সভ্যতার বা হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য pdf

সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য


শ্রেণী বিভক্ত সমাজ ছিল এই সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 

মাতৃতান্ত্রিক ছিল। 

মিশ্র সাংস্কিতি ছিল।  

পরিবার ছিল সমাজের মূল একক। 

সিংহের ব্যাবহার জানতো না। 

পোড়া ইট ও রোদে শুকানো ইট ব্যাবহার করা হাত। 

 প্রায় ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতা

 তাম্র প্রস্তর যুগ ও ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা

 সমগ্র পৃথিবীর বৃহত্তম সভ্যতা 

নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা

 উন্নত জল নিকাশি ব্যবস্থা  

বৈদিক বাণিজ্য

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য pdf আকারে আলোচনা করা হলো


১. নগর পরিকল্পনা

সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল এর সুসংগঠিত নগর পরিকল্পনা। শহরগুলো গড়া হয়েছিল গ্রিড পদ্ধতিতে— অর্থাৎ রাস্তা ও গলিগুলো একে অপরকে সমকোণে অতিক্রম করত। ঘরবাড়িগুলো ইট দিয়ে নির্মিত হতো এবং সেগুলো ছিল সমান আকারের। প্রতিটি বাড়িতে কক্ষ, উঠান ও স্নানাগার থাকত। এমনকি দুতলা বাড়িরও নিদর্শন পাওয়া যায়। এই ধরনের পরিকল্পনা প্রমাণ করে যে মানুষেরা অত্যন্ত উন্নত প্রকৌশল বিদ্যা ও স্থাপত্য জ্ঞান অর্জন করেছিল।

২. পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা

সিন্ধু সভ্যতার আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের সুপরিকল্পিত পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রতিটি ঘরে কূপ বা কুয়ার ব্যবস্থা ছিল, যেখান থেকে পানি সংগ্রহ করা যেত। ঘরের ভেতরের স্নানাগার থেকে পানি নির্দিষ্ট নালার মাধ্যমে শহরের প্রধান নর্দমায় গিয়ে মিলত। এই নর্দমাগুলি ইট দিয়ে বাঁধানো ছিল এবং ঢাকনা দিয়ে ঢাকা থাকত। এত উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেম প্রাচীন বিশ্বের অন্য কোথাও ছিল না।

৩. কৃষি ব্যবস্থা

সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল। তারা গম, যব, চাল, তিল, তুলা ইত্যাদি উৎপাদন করত। বিশেষত তুলা চাষে তারা বিশ্বের প্রথমদিককার জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম। সেচব্যবস্থার সাহায্যে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল। গরু, ভেড়া, ছাগল প্রভৃতি গৃহপালিত পশু চাষের কাজে ব্যবহৃত হতো।

৪. শিল্প ও কারুশিল্প

সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা কুম্ভকার শিল্প, ধাতব শিল্প, গয়না ও খেলনা তৈরিতে দক্ষ ছিল। তামা, ব্রোঞ্জ, সোনা, রুপা প্রভৃতি ধাতু দিয়ে তারা বিভিন্ন জিনিস তৈরি করত। তারা দারুণ মানের মৃৎশিল্পও তৈরি করত, যার মধ্যে লালচে রঙের মাটির পাত্রে কালো নকশা আঁকা থাকত। খেলনার মধ্যে মাটির তৈরি গাড়ি, পশুপাখির প্রতিমা, এবং ছোট পুতুল উল্লেখযোগ্য।

৫. বাণিজ্য ব্যবস্থা

সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্যে পারদর্শী ছিল। তারা মেসোপটেমিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। নৌকা ও গরুর গাড়ি ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করা হতো। তুলা, শস্য, হাতির দাঁত, গয়না, ধাতু ইত্যাদি বাণিজ্যের প্রধান উপাদান ছিল। তাদের ব্যবহৃত সীলমোহর (Seal) বাণিজ্যিক লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

৬. সামাজিক জীবন

সামাজিক দিক থেকে সিন্ধু সভ্যতা ছিল সমানাধিকারভিত্তিক। রাজা বা পুরোহিত শ্রেণির প্রাধান্য ছিল কি না, তা স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে বোঝা যায় যে সেখানে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তারা পরিচ্ছন্নতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিত। পুরুষ ও নারী উভয়েই গয়না ব্যবহার করত এবং পোশাক ছিল সাধারণ ও হালকা।

৭. ধর্ম ও বিশ্বাস

সিন্ধু সভ্যতার মানুষ প্রকৃতিপূজক ছিল। পশু, বৃক্ষ ও উর্বরতার প্রতীক তারা দেবতার রূপে পূজা করত। শিবলিঙ্গ ও মাতৃদেবীর প্রতিমার নিদর্শন পাওয়া গেছে। গাছের পূজা, পশুপূজা ও অগ্নিপূজার প্রমাণ মেলে। তারা পরকালের বিশ্বাসী ছিল এবং মৃতদেহ সমাধিস্থ করত।

৮. লিপি ও শিক্ষা

সিন্ধু সভ্যতার অন্যতম রহস্য হলো তাদের লিপি। প্রায় ৪০০টির মতো চিহ্ন নিয়ে গঠিত এই লিপি এখনো অবিদিত। এই কারণে তাদের সাহিত্য, আইনকানুন বা প্রশাসনিক দিক সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য জানা যায়নি। তবে লিপির অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে তারা শিক্ষিত ও জ্ঞানসমৃদ্ধ ছিল।

৯. রাজনৈতিক জীবন

সিন্ধু সভ্যতায় কোনো রাজপ্রাসাদ বা রাজতন্ত্রের স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় যে প্রতিটি নগরে প্রশাসনিক পরিষদ বা গোষ্ঠীশাসন ছিল। শহরের পরিকল্পনা ও শৃঙ্খলা দেখে বোঝা যায় যে কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল।

১০. পতনের কারণ

সিন্ধু সভ্যতার পতনের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে নদীর গতিপথ পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা কিংবা বাইরের আক্রমণ এ সভ্যতার ধ্বংসের জন্য দায়ী হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

সিন্ধু সভ্যতা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের গৌরবময় অধ্যায়। এর নগর পরিকল্পনা, উন্নত কৃষি ও বাণিজ্যব্যবস্থা, শিল্পকলা ও সামাজিক সমতা আজও বিস্ময় জাগায়। যদিও তাদের লিপি আজও পাঠোদ্ধার হয়নি, তবুও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে আমরা বুঝতে পারি যে তারা অত্যন্ত উন্নত, সংগঠিত ও সংস্কৃতিপ্রবণ জনগোষ্ঠী ছিল। সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য কেবল প্রাচীন ইতিহাসেই নয়, আধুনিক নগর পরিকল্পনা ও মানবসভ্যতার বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।


সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য pdf আকারে আলোচনা করা হলো




Next Post Previous Post